ইস্তেগফার ও তাওবার প্রকৃত মর্ম
ভূমিকা
পৃথিবীর মধ্যে অধিকাংশ মানুষ তারা তাওবার তাফসীর করে থাকেন তিনটি বিষয়ের মধ্য দিয়ে গুনাহে লিপ্ত না হওয়ার দ্বারা দৃঢ় পরিকল্পনা করে তাৎক্ষণিকভাবে গুনা থেকে বিরত থাকার ।
এবং অতীতের গুনাহের উপর অনুতপ্ত হওয়ার কথা মনে করে আর যদি বান্দার হক সংক্রান্ত কোনো কিছু হয় তাহলে চতুর্থ আরেকটি বিষয় জরুরি তা হলো যেগুলো বান্দার কাছ থেকে কোন হক আমরা নষ্ট করেছি সেই হোক বান্দার কাছেই ফিরিয়ে দিতে হবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ-ইস্তেগফার ও তাওবার প্রকৃত মর্ম
তাওবার আলোচনা
প্রকৃতপক্ষে ইস্তেগফার বা তাওবা নিয়ে পৃথিবীর বুকে অধিকাংশ মানুষ এই তওবা তিন ভাগে তাফসীর করে থাকেন । আর যারা এই বিষয়গুলো উল্লেখ করে থাকেন তারা হলো তাওবা সম্পর্কে কিছু অংশ বা তাওবা করার কিছু শর্ত মানুষের সামনে বলে থাকেন । অন্যথায় আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুলের বানিতে এই তাওবার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকার সাথে সাথে এর মধ্যে আরেকটি বিষয় জড়িত রয়েছে ।
তা হচ্ছে সেই গুনাহের বিপরীতে যে বিষয়ের আদেশ করা হয়েছে তা পরিপূর্ণ রূপে করার সুদৃঢ় ইচ্ছা থাকতে হবে । বা তা পালন করতে হবে নিজের উপর সেইগুলো করে নিতে হবে । সুতরাং আমরা যখন কোন গুনাহের সাথে লিপ্ত হয়ে যাব তখন আমাদেরকে এই গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে । পুনরায় সেই গুনাহে লিপ্ত না হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ হয়ে দৃঢ় সংকল্প করতে হবে ।
যে হে আল্লাহ আমি আর ওই গুনাহের সাথে লিপ্ত হব না । এই দৃঢ় সংকল্প করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে কোন সূচনার মাধ্যমে কোন তাওবা কারী গণ্য হয়ে থাকে । এবং আল্লাহর কাছে কোন কোন তাওবা করি অনুশোচনা না করার জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা কারী হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাই না। এবং যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেছেন সেই বান্দা যতক্ষণ না সেই আদেশ গুলো পালন করে ।
আল্লাহর দিকে সুদৃঢ় ভাবে প্রতিজ্ঞা না করে ততক্ষণ সেই ব্যক্তির প্রতিজ্ঞা কবুল হয় না আল্লাহর কাছে সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে আর এটাই হল ইস্তেগফার বা তাওবার প্রকৃত মর্ম। তাওবা হচ্ছে এই দুইটি বিষয়ের সম্মিলিত না তবে যদি কোন আবিষ্কৃত বিষয়টি এর সাথে সংযুক্ত থাকে তাহলে তারা যে সমস্ত কথা উল্লেখ করেছেন ।
তাই পালন করতে হবে আর যদি সংযুক্ত না হয় আলাদাভাবে কোন কথা বলে থাকেন তাহলে তা এর সাথে অন্তর্ভুক্ত হবে না আর যদি তাওবা সম্পর্কে কোন কথা বলে থাকেন তাহলে এই দুটি বিষয় তাওবার সাথে অন্তর্ভুক্ত হবে।
তাওবার মেন অর্থ হচ্ছে
আল্লাহর দিকে মানুষকে ফিরে আসতে হবে আল্লাহ তাআলা যা যা মানুষের উপর ওয়াজিব করেছেন তারা পুঙ্খানুভাবে আদায় করার মাধ্যমে । এবং তিনি যা অপছন্দ করেছেন সে সব অপছন্দ কৃত জিনিস থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে । সুতরাং আল্লাহ তায়ালা যে সমস্ত অপছন্দনীয় বিষয়ে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন সেই সমস্ত অপছন্দনীয় বিষয় থেকে আমাদের নিজেদেরকে সংযমে রাখতে হবে ।
এবং পছন্দনীয় দিকে আমাদেরকে সদা সর্বদা ধাপিত হতে হবে আর আমরা যদি এই বিষয়গুলো ভালোভাবে মেনে চলতে পারি তাহলে আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ তা পাবো । এবং আল্লাহ তা'আলা যে সমস্ত পছন্দনীয় বিষয়াদের দিকে ধাবিত হতে বলেছেন সেই সমস্ত বিষয়াদির দিকে ধাবিত হওয়ার নামই হচ্ছে তাওবা। এবং এইখানে দুইটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে ।
এর মধ্যে একটি হচ্ছে মাকরুহ বা বা অপছন্দনীয় বিষয় থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে আরেকটি হলো মাহবুব বা পছন্দনীয় আমাদেরকে পছন্দনীয় জিনিসের দিকে ধাবিত হতে হবে আর এই দুই কারণেই আল্লাহতালা আদেশকৃত কাজগুলো পরিত্যাগ করার সাথে সাথে সফলতাকে সম্পৃক্ত করে নিয়েছেন।
- وتوبوا الى الله جميعا ايها المؤمنون لعلكم تفلحون
- হে মুমিনগণ তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তওবা কর আশা করা যায় তোমরা সবাই সফলকাম হবে।
সুতরাং প্রত্যেক তাওবা কারী ব্যক্তি হবে সফল তবে সেই ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত সফল হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকে যা আদেশ করা হয়েছে তা আদায় করে এবং যা তাকে নিষেধ করা হয়েছে তা থেকে নিজেকে বিরত রাখে।
জালিম বা অত্যাচারী
আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমর মধ্যে বলেন
- ومن لم يتب فاولئك هم الظالمون
- আর যারা তাওবা করে না তারাই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে জালেম বা অত্যাচারী
যে সমস্ত বান্দা হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে আল্লাহর আদেশ পরিত্যাগ করে সেই সমস্ত পরিত্যাগ কারী ব্যক্তি আল্লাহর নিকট জালিম সুতরাং আমাদেরকে জুলুম থেকে বেঁচে থাকতে হলে যে বিষয়েই তাওবা করতে হবে উপরে উল্লেখিত আয়াতে তাই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে সমস্ত মানুষ এই দুই টির মধ্যে সীমাবদ্ধ
তাওবার সীমাবদ্ধতা দুইটি
- ১। যারা আল্লাহর নিকট তাওবা করে
- ২। যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে অস্বীকার করে তারা জালেম
আল্লাহ তাআলা বলছেন তওবা কারী ব্যতীত সবাই জালেম আর তাওবা কারই হচ্ছে নিম্নোক্ত আয়াতের গুনে গুণান্বিত।
- العابدون الحامدون السائحون الراكعون الساجدون الامرون بالمعروف والناهون عن المنكر والحافظون لحدود الله
- আল্লাহ তাআলা বলেন ইবাদত কারী শোকর গুজার কারি দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ কারী রুকু ও সাজদা আদায়কারী সৎ কাজের আদেশ দানকারী মন্দ কাজ থেকে নিষেধ দানকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমা সমূহের হেফাজত কারী।
আল্লাহর দেওয়া সীমারেখা হেফাজত করা হলো তাওবার একটি অংশ আর তাওবা হচ্ছে এই সবগুলো বিষয়ের সমষ্টির নাম তাওবা কারীকে তাঈদ বলা হয়ে থাকে যে সে আল্লাহর নিষেধকৃত বস্তু সমূহ থেকে আল্লাহর আদেশকৃত বস্তুর দিকে এবং গুনাহ ছেড়ে তার আনুগত্যের দিকে ফিরে আসে যেমন তার পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।
তাওবাই হল দ্বীন ইসলামের হাকিকত
আমরা যারা দিনের উপর অটল রয়েছি তারা ভালোভাবেই জানি যে পূর্ণাঙ্গ দিনের জন্য তাওবা করা অপরিহার্য । এর দ্বারা তাওবা কারী আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হয় । কারণ আল্লাহ তাআলা তওবা কারী দেরকে ভালোবাসেন । পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন এবং সেই সমস্ত ব্যক্তিদের প্রতিনিধি ভালোবাসতেন । যারা তার দেওয়া আদেশ গুলোকে পুঙ্খানু ভাবে পালন করেন ।
এবং যে সমস্ত জিনিস নিষেধ করেছেন সে সমস্ত জিনিস গুলোকে যারা বর্জন করেন তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন। এর কারণ হচ্ছে তাওবা হল প্রকাশ্য ভাবে ও অপ্রকাশ্য ভাবে আল্লাহ তায়ালা যা অপছন্দ করেন তা থেকে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ভাবে তিনি যা পছন্দ করেন সেই দিকে ফিরিয়ে আসা।
তাওবার মধ্যে রয়েছে ঈমান ও ইসলাম
আল্লাহ তাআলা বলছেন যে তাওবার মধ্যে রয়েছে ঈমান ও এহসান শামিল । এবং তার সমস্ত মনজিল ও মাকাম কে অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন । আর এ কারণেই প্রতিটা মুমিনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হতে হবে এবং এর শেষ ও শুরু হতে হবে তাওবার মাধ্যমে । যেমনটি পূর্বে আলোচিত হয়েছে । যে এটি হলো সেই উদ্দেশ্য যার জন্য সমগ্র সৃষ্টি জগতকে একত্রিত করা হয়েছে । আদেশ ও তৌহিদ হল এর একটি অংশ। বরং বলা যায় সবচেয়ে বড় অংশ যার উপরের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে ।
অধিকাংশ মানুষ তাওবার মর্যাদা ও প্রকৃত মর্মই বুঝে না যেমন ভাবে ইলমি ও আমলি অবস্থা গতভাবে তা আদায় করা হয় তা অনেক দূরের কথা আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা কারীদের এক বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান রয়েছে তিনি তাদেরকে অনেক ভালোবাসেন যদি আমরা তাওবার মধ্যে পুরাপুরি ইসলামের শরীয়তকে ও ঈমানের হাকিকত গুলোকে অন্তর্ভুক্ত না করি তাহলে আল্লাহ তা'আলা বান্দার তাওবার কারণে অত বেশি খুশি হতেন না।
ইস্তেগফার এর আলোচনা
ইস্তেগফার দুই প্রকার
- ১। আলাদাভাবে উল্লেখ কৃত ও
- ২। তাওবার সাথে যুক্ত করে উল্লেখ কৃত
১। আলাদাভাবে উল্লেখকৃত ইস্তেগফার যেমনঃ-আপন কাউকে উদ্দেশ্য করে নূহ আলাইহিস সালাম এর বক্তব্য শুনুন।
- فقلت استغفروا ربكم انه كان غفارا
- يرسل السماء عليكم مدرارا
- অতঃপর আমি বলেছি তোমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো নিঃসন্দেহে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল তাহলে তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধরা বর্ষণ করবেন
যেমন ভাবে আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ
- وما كان الله ليعذبهم وانت فيهم وما كان الله معذبهم وهم يستغفرون
- অথচ আল্লাহ কখনোই তাদের উপর আযাব নাজিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন তাছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমাপ্রার্থনা করবে আল্লাহ কখনো তাদের উপর আজাব দেবেন না।
তাওবার সাথে সংযুক্ত করে উল্লেখ কৃত যেমনঃ-
আল্লাহ তাআলার বাণী
- وان استغفر ربكم ثم توبوا اليه لي متعكم متاعا حسنا الى اجل مسمى ويعطي كل ذي فضل فضله
- তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও এবং তার নিকট তাওবা করো তাহলে তিনি একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে উত্তম জীবন দান করবেন
উপসংহার
আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত ওপরে উল্লিখিত যেই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম । তাতে আমরা এটাই বুঝতে পারলাম যে আমরা যাহাই করি না কেন আল্লাহর কাছে সদা সর্বদা আমাদেরকে পাক ও পবিত্র থাকতে হবে । এবং এই পাক ও পবিত্র থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে আমাদেরকে ইস্তেগফার ও তওবা করতে হবে । এবং আমাদেরকে এই ইস্তেগফার ও তাওবার মাধ্যমে পাক ও পবিত্র হতে হবে । আর আল্লাহ তায়ালা পাক ও পবিত্র দেরকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসেন । এবং যারা ভুল করার পরে গুনাহ করার পরে আল্লাহর কাছে মাফ চাই তারাই হচ্ছে প্রকৃত মমিন। তাই আমাদেরকে মমিনদের খাতায় নাম লিখাতে হলে সব সময় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে ইস্তেগফার ও তাওবা করতে হবে।
সিফাতুল্লাহ্ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url