অতিরিক্ত চিন্তা করলে কি ক্ষতি হয় - অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
পেজ সূচীপত্রঃ অতিরিক্ত চিন্তা করলে কি ক্ষতি হয় বিস্তারিত জানুন
- অতিরিক্ত চিন্তা করলে কি ক্ষতি হয়
- অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
- টেনশনের শারীরিক লক্ষণ
- খারাপ চিন্তা করলে কি হয়
- অতিরিক্ত টেনশন হলে কি করব
- কি খেলে টেনশন দূর হয়
- টেনশন করলে কি কি রোগ হয়
- চিন্তা দূর করার ঔষধ
- খারাপ চিন্তা করলে কি গুনাহ হয়
- লেখকের শেষ মন্তব্য
অতিরিক্ত চিন্তা করলে কি ক্ষতি হয়
অতিরিক্ত চিন্তা করলে কি ক্ষতি হয় বিষয়টি খুবই গুরতর।অতিরিক্ত চিন্তা করার কারণে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন সাধারণ চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে, মনের অবস্থা খারাপ হয়, নিজের সাথে এবং অন্যের সাথে তৈরি হয় এবং নিজের কাজের ক্ষমতা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় ইত্যাদি। নিম্নে আরো বিস্তারিত বলা হলো-
মানসিক সমস্যাঃ অতিরিক্ত চিন্তা ও চাপের কারণে মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যেমন এই অতিরিক্ত চিন্তা এবং চাপ সম্পর্কে যে কথাটা বলব সেটি হচ্ছে যে এই গুলো অর্থাৎ ডিপ্রেশন এনজাইটি বা অতিরিক্ত চিন্তা চাপের কারণে মনের বিকার হতে পারে।
শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতিঃ অতিরিক্ত চিন্তা ও চাপ এর কারণে আমার ব্যক্তির শারীরিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতভাবে অবনতি হতে পারে। এটি নিজের অবস্থার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে এবং প্রতিদিনের কাজের সাথেও সম্পর্কিত হতে পারে। দৈনন্দিন এর কাজে ভুল ও খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
ধর্মীয় সমস্যাঃ অতিরিক্ত চিন্তার কারণে ধর্মীয় সমস্যা হতে পারে, ধর্মীয় কাজ এর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন ধর্ম বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে।
ক্রিয়াশীলতার অবনতিঃ অতিরিক্ত চিন্তার প্রভাবে ব্যক্তির ক্রিয়াশীলতায় অবনতি ঘটতে পারে এবং কাজের ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
কনসেনট্রেশনের সমস্যাঃ অতিরিক্ত চিন্তা ও চাপের কারণে মনের কন্সেন্ট্রেশন নিশ্চিতভাবে ব্যাঘাত ঘটে।
আরো পড়ুনঃ শরীর দুর্বল হলে করণীয় কি
স্বাস্থ্যহানিঃ অতিরিক্ত চিন্তা করলে স্বাস্থ্যের হানি বা ক্ষতি হয় যেমন রক্তচাপ বা হৃদরোগের মত রোগের জন্য যা খুবই খারাপ প্রভাব ফেলে।
ঘুমের সমস্যাঃ অতিরিক্ত চিন্তা করার জন্য ঘুমের সমস্যা হতে পারে যেমন ইনসনিয়া। ইনসমনিয়া হচ্ছে অনিদ্রা রোগ অর্থাৎ রাতে বারবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, ঘুম না আসা, সারা দিন তন্দ্রা ভাব, কাজে মনোযোগ না থাকা ইত্যাদি।
নিজের সঙ্গে সম্পর্কঃ চিন্তা ও চাপের প্রভাবে নিজের সঙ্গে সম্পর্কে সমস্যা হতে পারে যেমন আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, নিজের সহজাত বিষয়টি লোপ পাওয়া ইত্যাদি।
পারিবারিক সমস্যাঃ অতিরিক্ত চিন্তার কারণে পরিবারের সদস্যদের সাথে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয যেটি আরও বড় থেকে বড় ক্ষতি সৃষ্টি করতে পারে।
আর্থিক সমস্যাঃ অতিরিক্ত বা খুব বেশি চিন্তার কারণে আর কি সমস্যা হতে পারে যেমন চিন্তাকারী খরচের উৎসের নিয়ন্ত্রণ হারায়।
সামাজিক সমস্যাঃ খুব বেশি চিন্তার কারণে সমাজের লোকদের সাথে বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়, বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়, যেটা সামাজিক ক্ষতির কারণ।
সম্পর্কের সমস্যাঃ অতিরিক্ত বা অত্যাধিক চিন্তার প্রভাবে সম্পর্কের টানা-পোড়েন এর সমস্যা হয়, যেমন সঙ্গীর সাথে ঝগড়া বা বিরক্তি প্রকাশ ইত্যাদি।
সামগ্রিকভাবে যে কথাটা বলা যায় সেটি হচ্ছে অতিরিক্ত চিন্তা করা মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটি প্রভাব ফেলতে পারে। এ সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য সাধারণত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করার খুবই প্রয়োজন-দরকার।
অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
অতিরিক্ত চিন্তা করলে যে ক্ষতি এটা থেকে মুক্তির বিভিন্ন উপায় রয়েছে। অতিরিক্ত চিন্তা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিম্নে কিছু উপায় লিখা হলো-
নিয়মিত ধ্যান ও মেডিটেশনঃ অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্তির একটি সুন্দর উপায় হচ্ছে নিয়মিত ধ্যান ও মেডিটেশন করা।
নিয়মিত ব্যায়ামঃ অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্তির আরও একটি উপায় হচ্ছে নিয়মিত ব্যায়াম করা, নিয়ম শরীর চর্চার মাধ্যমে এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণঃ অতিরিক্ত চিন্তা ও চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজের মনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সুস্থ খাবারঃ অতিরিক্ত চিন্তা হতে বের হয়ে আসতে নিয়মিত সুস্থ খাবার খাওয়া অত্যান্ত জরুরী।
নিয়মিত ঘুমঃ অতিরিক্ত চিন্তা ও চাপ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ঘুমের মাধ্যমে চিন্তা, চাপ, প্রেসার, স্ট্রেস এগুলো দূর হয়ে থাকে।
সামাজিক সম্পর্কের উন্নতিঃ অতিরিক্ত চিন্তা থেকে বের হয়ে আসার জন্য সমাজের মানুষের সাথে বেশি বেশি সম্পর্কে উন্নয়ন জরুরী। তাদের সাথে বেশি সময় কাটানো, কথা বললে অনেক উন্নতি হতে পারে।
স্বয়ংক্রিয় কার্যকর স্ট্রেচিংঃ নিজের কাজের ক্ষমতার অভাবে চিন্তা ও চাপ সৃষ্টি হতে পারে, এই জন্য পরিশ্রম এবং স্ট্রেচিং করা অত্যন্ত দরকারী।
সৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের স্থিরতাঃ সৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে স্থির করার মাধ্যমে নিজের চিন্তা ও চাপ থেকে মুক্তি পেতে বিষয়টি অত্যন্ত সাহায্যকারী।
আত্মসম্মান ও সহানুভূতিঃ আত্মসম্মান ও সহানুভূতি নিজেকে অন্যদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে চিন্তা করতে ও চাপ থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আলাদা সময় কাটানোঃ নিজের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করা এবং স্থিরতা ও শান্তি অনুভব করা বিষয়টি অতিরিক্ত চিন্তা এবং চাপ থেকে মুক্তি পেতে খুবই উপকারী।
পেশাদারি সাহায্য প্রাপ্ত হওয়াঃ পেশাদারী সাহায্যপ্রাপ্ত হওয়া বিষয়টা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, কোচিং অথবা পরামর্শ প্রদান করতে সাহায্য করতে পারে যেটি অতিরিক্ত চিন্তা ও চাপের সমস্যাগুলি মোকাবেলায় সহায়ক।
এই উপায়গুলি নিয়ে কাজ করলে অতিরিক্ত চাপ ও চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। তবে, যদি আপনি মনে করেন যে আপনি চিন্তা ও চাপের কারণে মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তবে একজন মনোযোগী বিশেষজ্ঞ পেশাদার ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করে তার থেকে সাহায্য নিতে পারেন।
টেনশনের শারীরিক লক্ষণ
অতিরিক্ত চিন্তা করলে কি ক্ষতি হয় বিষয়টির সাথে এই টেনশন বিষয়টি সম্পৃক্ত। আর টেনশন বা চাপের কারণে শারীরিক লক্ষণ গুলো বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন বিষয়টি নিম্নরুপ-
মাথায় ব্যথাঃ টেনশনের কারণে মাথাব্যথা হতে পারে
মাংসপেশী শক্তিশালী হওয়াঃ টেনশনের কারণে মাংসপেশি শক্তিশালী হয়ে যেতে পারে।
অনিদ্রা এবং শক্তি হারানোঃ টেনশনের কারণে ঘুম না হতে পারে এবং শক্তি নষ্ট হতে পা।
শ্বাসকষ্টঃ টেনশনের কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মাথার পেছনে ব্যথার কারণ কি
দৌড়ানোর সময় হৃদয়ের ধাক্কাঃ টেনশনের কারণে দৌড়ানোর সময় হৃদয়ে বেশি বেশি ধাক্কা লাগতে পারে।
পেটে ব্যথা এবং অত্যন্ত সম্ভাব্য বমিঃ টেনশনের কারণে পেটে ব্যথা এবং বমি হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে।
মুখের লালতা এবং চোখে গোলাপ হওয়াঃ টেনশনের কারণে মুখে লালতা ভাব এবং চোখে গোলাপ ভাব চলে আসা।
অতিরিক্ত চিন্তা করলে কি ক্ষতি হয় বিষয়টি টেনশনের সাথে অত্যন্ত সম্পৃক্ত একটি বিষয় তাই এখানে টেনশন সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত বলা হলো।
খারাপ চিন্তা করলে কি হয়
শুধু চিন্তা বা অতিরিক্ত চিন্তায় নয়, খারাপ চিন্তা করলে শারীরিক মানসিক বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে এজন্য বিষয়টি খুবই ঈর্ষা কাতর। খারাপ চিন্তা করার কারণে ডিপ্রেশন বা হতাশা এনজাইটি বা উদ্বিগ্নতা এবং এক্সপেক্টলেস বা আশাহীনতা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই এ ধরনের খারাপ চিন্তা থেকে আমাদের বেঁচে থাকা ভালো। খারাপ চিন্তা বলতে মনের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের কুচিন্তা যেগুলো মনের ভিতরে ক্ষতিকর প্রভাব হলো।
অতিরিক্ত টেনশন হলে কি করব
অতিরিক্ত টেনশন হলে যে বিষয়টি করতে হবে সেটি হচ্ছে পূর্বের ন্যায় এখানেও বলবো যে নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যান করতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পরিবর্তনশীল আহার অত্যান্ত দরকারি, শক্তিশালী স্ট্রেচিং করতে হবে, সমাধান খুঁজতে হবে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হবে, নিজের সাথে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে ও সহযোগিতা চাইতে হবে।
তাই টেনশন হোক অথবা অতিরিক্ত টেনশন হোক বিষয়টি চিন্তার সাথে সম্পর্ক। আপনি এই টেনশন বা চিন্তার সম্পর্কিত বিষয়টি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে, আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং এক্ষেত্রে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য চর্চা করতে হবে, যেটা জরুরী ভিত্তিতে করতে হবে। আর না হলে আপনি মুক্তি পাবেন না চিন্তা রোগ থেকে।
কি খেলে টেনশন দূর হয়
খাবারের ভিতরে বিভিন্ন উপকারী খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে টেনশন দূর হয়ে থাকে। যেমন ফল ও সবজি খেতে হবে, প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে, ক্যাফেইন সীমাবদ্ধ রাখতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে ইত্যাদি। বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন হবে মানসিক স্বাস্থ্যচর্চা অভ্যাস করতে হবে তাহলে এই টেনশন দূর হওয়ার সমালোচনা করবে
টেনশন করলে কি কি রোগ হয়
টেনশন করলে যে রোগগুলো হয়ে থাকে সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো। যেমন শারীরিক সমস্যা অর্থাৎ মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, চোখ ব্যথা ও দাঁত ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। আমার মানসিক সমস্যা হতে পারে ডিপ্রেশন ফ্রাস্টেশন বা হতাশ হওয়া বা নিরাশ হওয়া, এনজাইটি বা উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি। তাই টেনশন যদি হয় শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার কারণ তাহলে এটি থেকে আমাদের বেঁচে থাকাটাই ভালো।
চিন্তা দূর করার ঔষধ
চিন্তা দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ রয়েছে যেমন হোমিওপ্যাথি, এলাপ্যাথি, হারবাল ও ভেষজ ইত্যাদি। তবে এক্ষেত্রে একজন সুদক্ষ যোগ্য চিকিৎসক বা ডাক্তারের সুপরামর্শ গ্রহণ করে কি ঔষধ খেতে হবে চিন্তা দূর করার জন্য তা তার থেকে শুনে নিয়ে ডিসপেনসারি বা ফার্মেসিতে গিয়ে ঔষধ গুলো গ্রহণ করে তা সেবন করা একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাজ হবে এবং আপনি শুধু চিন্তা বা অতিরিক্ত চিন্তা থেকে বাঁচবেন।
খারাপ চিন্তা করলে কি গুনাহ হয়
ইসলাম ধর্মে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখনিঃসৃত বাণীর অসংখ্য বাণীতে রয়েছে যে খারাপ চিন্তা অন্তরের ভিতরে জাগরণ হলে, সেই খারাপ চিন্তাটা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পাপ হয় না বা গোনাহ হয় না। তবে খারাপ চিন্তা করার পরে সেটি কাজে পরিণত করলে গুনাহ বা পাপ হয়ে যায়। এজন্য যতদূর সম্ভব শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থেকে খারাপ চিন্তা থেকে মুক্ত থাকাই বিবেচনার কাজ হবে।
সিফাতুল্লাহ্ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url